ভোট মিটতেই সন্দেশখালিতে রাতভর সন্ত্রাস, মিনাখাঁয় তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টা

অশান্তি রুখতে সন্দেশখালিতে পুলিশ ও বাহিনীর রুটমার্চভোট মিটতেই তেতে উঠল সন্দেশখালি। রাতের অন্ধকারে এলাকার বাসিন্দাদের উপর তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা তৃণমূলের উপপ্রধান সহ একাধিক কর্মীকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।রবিবার গভীর রাতে সন্দেশখালি দু’নম্বর ব্লকের খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লব বর্মনের বাড়িতে বিজেপির সমর্থকরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে ওই দুষ্কৃতীরা রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। পাল্টা সন্দেশখালি থানার অধীন খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিতাই মোড়ের বাসিন্দা এক গ্রামবাসী পিয়ালী মণ্ডল অভিযোগ করেন, উপপ্রধান বিপ্লব বর্মন জোর করে তাঁর দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। ভোটের পর থেকেই তাঁকে ভয় দেখানো হচ্ছে।পিয়ালী বলেন, “রবিবার গভীর রাতে এলাকার প্রায় ৬০-৭০ জন তৃণমূল কর্মী বাইক নিয়ে এসে এলাকায় জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করায় তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা।”তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লববাবু। তিনি বলেন, “এলাকায় চক্রান্ত করে নতুন করে অশান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। এরসঙ্গে কোনওভাবেই আমরা জড়িত নই। বেছে বেছে আমাদের কর্মীদের রাতের অন্ধকারে ভয় দেখানো হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”রবিবার রাতেই এককাট্টা হয়ে গ্রামের মানুষ সন্দেশখালি থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। গ্রামের মহিলারা বলেন, “বরাবরই এই আতঙ্ক নিয়েই থাকতে হচ্ছে তাঁদের। রাতের অন্ধকারে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালিয়ে ঘুম কেড়ে নিয়েছে তাঁদের। ভোট মিটতেই আবারও একই অভিজ্ঞতা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।এদিকে বসিরহাট লোকসভারই মিনাখাঁয় এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে বিজেপি। মিনাখাঁ বিধানসভার মুকুন্দপুরের তৃণমূল কর্মী বাপ্পা মণ্ডল। পেশায় তিনি গাড়ি চালক। এবার ভোটের ডিউটিও করেছেন। রবিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন।

হঠাৎই একদল দুষ্কৃতী সেখানে চড়াও হয়ে তাঁকে দোকান থেকে বের করে এনে মাথায় এলোপাথাড়ি বাঁশ দিয়ে মারতে শুরু করেন।স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে হালুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে। দুই বিজেপি কর্মী অচিন্ত্য সর্দার ও জয়ন্ত সর্দারের বিরুদ্ধে হাড়োয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী। তিনি বলেন, “আমি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। অনেক দিনের রাগ ছিল আমার উপরে। তাই পরিকল্পনা করে এসে আমাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিল।”হাড়োয়ার মণ্ডল বিজেপি সহ-সভাপতি অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, “একটা ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। সেটা পারিবারিক অশান্তি। ইচ্ছা করে রাজনৈতিকভাবে বিজেপি দলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। এটা রাজনৈতিক কোনও বিষয়ই নয়।”গতকাল দিনভর পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের খণ্ডযুদ্ধের পর সোমবারও সকাল থেকেই থমথমে সন্দেশখালি। কানমারি, বয়ারমারি, ন্যাজাট থানার অন্তর্গত সরবেড়িয়া, আগারহাটি, রাজবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশের টহলদারি চলছে। রুট মার্চ করছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও।