আপনি কি আপনার সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে চান? তাহলে, এক্ষুনি একবার দর্শন করে আসুন এই যুগল কিশোরের মন্দিরে….

মলয় দে নদীয়া :- কি আমাদের কথাটা শুনে অবাক লাগছে?ভাবছেন একটি মন্দিরে গিয়ে, কিভাবে আপনার সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে?তবে আমরা নয়, এলাকার বুকে এই জাগ্রত যুগল কিশোর মন্দিরের, অজানা কাহিনী শুনলে হয়তো আপনিও চমকে উঠবেন…….১৭২৮ সালে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির। কথায় আছে, এক সময় গঙ্গারাম দাস নামের এক ব্যক্তি বৃন্দাবন থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এক কিশোর মূর্তি নবদ্বীপের সমুদ্রগড়ে স্থাপন করে পুজো করা শুরু করেছিলেন। সেই সময় ছিল বর্গীদের উপদ্রব। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিটি নিয়ে আড়ংঘাটায় চলে এসেছিলেন।

সেখানেই গোপীনাথ জিউর মন্দির ছিল। সেই মন্দিরের পাশেই আরও একটি মন্দির নির্মাণ করে শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গঙ্গারাম দাস। প্রথমে সেই মন্দিরে শুধু মাত্র শ্রীকৃষ্ণের পুজা করা হতো। কিন্তু কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই স্থানে মাটি খুঁড়ে একটি রাধিকার মূর্তি পেয়েছিলেন। সেই মূতিটিকে শ্রীকৃষ্ণের কিশোর মূর্তির পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আর তখন থেকেই ঐ দুই মূর্তি ‘যুগলকিশোর’ নামে পরিচিত।তবে পৌরাণিক কাহিনীতে নয় বরং বাস্তবেই রাধা কৃষ্ণের মিলনের সাক্ষী আড়ংঘাটার যুগল মন্দির।

গঙ্গারাম নামে এক মহন্ত শ্রী কৃষ্ণের কিশোর বেলার এক মূর্তি নিয়ে আসেন বৃন্দাবন থেকে। নবদ্বীপের কাছে সমুদ্রগড়ে চলতো এ মূর্তির নিত্য পুজো। কিন্তু বর্গী হানার কারণে এই মূর্তি নিয়ে গঙ্গারাম চলে আসেন নদিয়ার রাণাঘাট মহকুমার আড়ংঘাটায়। এখানে তাঁরই স্বদেশী বন্ধু রামপ্রসাদের দ্বারস্থ হন তিনি। রামপ্রসাদ ছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কর্মচারী।ভগবানের প্রতিষ্ঠা তার ইচ্ছে ছাড়া তো হবার নয়। আর তিনি স্বপ্ন ছেড়ে কবেই বা স্বয়ং এলেন! গঙ্গারাম স্বপ্নাদেশ পান স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণের। কৃষ্ণ বলছেন, ‘আমার শ্রী রাধিকা আছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে।’ এ স্বপ্নাদেশের বার্তা মহারাজের কাছে বয়ে যায় রামপ্রসাদেরই মাধ্যমে।

এর কিছুদিন পর মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান, ‘বাড়ির ভূ-গর্ভস্থ স্থানে কিশোরী শ্রী রাধিকার ধাতব মূর্তি রয়েছে।’ মহারাজের তত্ত্বাবধানে শ্রী রাধিকার মূর্তি উদ্ধার করা হয়। মহারাজ স্বয়ং রাধিকাকে সঙ্গে নিয়ে বজরা করে চলে আসেন আড়ংঘাটায়।সময় বয়ে এসে ১৭২৮ সালে আড়ংঘাটায় প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরের পঙ্খ। অলংকৃত ও পাঁচটি ফুল কাটা খিলানের দুই সারি যুক্ত প্রশস্ত দালান মন্দির। যুগল কিশোরের স্থান সিংহাসনে, যা পুরো পরিবেশকে আলোকিত করে রাখে।মন্দির প্রাঙ্গণে গেলে মন যেমনি শান্ত হয়, তেমনি এখানে ধরা পড়ে পুরাণের ছোঁয়া।

আর মন্দির চত্বরে ৩০০ বছরের পুরনো বকুল গাছ, যা কিনা পরিচিত ‘সিদ্ধ বকুল’ নামে। কথিত আছে এই বকুল গাছ তলায় বিপদে পড়ে যদি কেউ মানত করে বকুল গাছে ইঁট ,নুড়ি বা শিলা বাঁধেন তিনি ফল পেয়ে যান হাতেনাতে । নিয়ম অনুযায়ী ফল পাবার পর ইঁট , নুড়ি বা পাথর বকুল গাছ থেকে খুলে এই স্থানে পুজো দেন মানতকারী । বিশ্বাস আর ভক্তিতে এই মন্দির আজ জাগত।তবে, কলকাতা শিয়ালদা স্টেশন থেকে গেদে ট্রেনে আড়ংঘাটায় নেমে পাঁচ মিনিট পথ । অন্যদিকে কৃষ্ণনগর থেকে বাসে করে আরংঘাটা নেমে পাঁচ মিনিটের পথ ।